
তিনি জানান, ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল সেতুর ২৯১৭ টি রোডওয়ে স্ল্যাব এর মধ্যে ১২৮৫ টি এবং ২৯৫৯ টি রেলওয়ে স্ল্যাব এর মধ্যে ১৯৩০ টি স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা ভায়াডাক্টে ৪৮৪টি সুপার-টি গার্ডারের মধ্যে ৩১০ টি স্থাপন করা হয়েছে। বাকি রোডওয়ে স্ল্যাব, রেলওয়ে স্ল্যাব ও সুপার-টি গার্ডার বসাতে প্রায় আটমাস সময় লাগবে। এরপরে স্ল্যাবের ওপর হবে পিচ ঢালাইয়ের কাজ। এছাড়া, ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজও বাকি।
দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের আরও জানান, ভাঙনের কারণে পদ্মা সেতুর ১২৬ টি রোডওয়ে স্ল্যাব ও ১৯২ টি রেলওয়ে স্ল্যাব নদীতে তলিয়ে যায়। সেগুলো নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। রেলওয়ে গার্ডার লুক্সেমবার্গ থেকে আনা হবে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ সেগুলো কনস্ট্রাকশন সাইটে চলে আসার কথা।
এসব কাজ ছাড়াও বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিযোগাযোগ লাইন স্থাপনের কাজ বাকি আছে। সব মিলিয়ে বছর খানেক পর যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে পদ্মা সেতু।.
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ পর্যন্ত মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯১ ভাগ।
এদিকে, পদ্মা সেতুর নদী শাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৭৫ দশমিক ৫০ ভাগ। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (নদী শাসন) মো. শরফুল ইসলাম সরকার জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পে সেতুর দক্ষিণপ্রান্তে মোট ১২ কিলোমিটার নদী শাসন কাজ হবে। এরমধ্যে ৮ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি এলাকায় তিন কিলোমিটার নদী শাসন কাজ বাকি আছে এবং উজানে আরও এক কিলোমিটার কাজ চলমান আছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য আগামী বর্ষার আগে নদী শাসনের প্রধান কাজ, যেমন- ড্রেজিং, বালুর বস্তা ফেলা, সিসি ব্লক ফেলা ইত্যাদি কাজ শেষ করা। যদি বর্ষার আগে এসব কাজ শেষ করা যায় তাহলে বর্ষা মৌসুমে পাথর ফেলা (ডাম্পিং) যাবে বলে জানান তিনি।.
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে একটি প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর পরিকল্পনা প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিস্তারিত সমীক্ষা পরিচালনার জন্য অর্থ সংগ্রহের জন্য সেতু বিভাগ থেকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অর্থায়নের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও জাপান দূতাবাসে চিঠি দেওয়া হয়। জাপান সরকার ইআরডির প্রস্তাবে সম্মত হয়ে ২০০১ সালের ৪ ডিসেম্বর চুক্তি স্বাক্ষর করে। সমীক্ষায় ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৫৩ কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০১ সালের ৪ জুলাই মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৩-০৫ সালে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পয়েন্টে এবং শরিয়তপুর জেলার জাজিরা পয়েন্টে সেতুর স্থান নির্বাচন করে। ২০০৫ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হলে প্রকল্পটি কারিগরি ও অর্থনৈতিক দিকে থেকে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়। পদ্মা সেতুর নির্মাণের পাশাপাশি আলাদা লাইনে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিযোগাযোগ স্থাপন করা হবে।
সমীক্ষার সুপারিশ অনুসারে ২০০৬ সালের মে মাসের মধ্যে মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার জেলা প্রশাসকদের থেকে ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠানো হয়। ২০০৭ সালের ১২ জুলাই ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প (ভূমি অধিগ্রহণ) অধ্যাদেশ, ২০০৭’ জারি করে সরকার। ২০ আগস্ট, ২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় সম্বলিত পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।.
প্রকল্পের আওতায় সেতুর দৈর্ঘ্য ছিল ৫.৫৮ কিলোমিটার, সংযোগ সড়ক ১২.১৬৩ কিলোমিটার ও নদী শাসন করা হবে ১৬.৩০ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে এডিবি ৩৫০ মিলিয়ন, বিশ্বব্যাংক ৩০০ মিলিয়ন এবং জাইকা ১৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার আশ্বাস দেয়। তবে, ২০১০ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বিশ্বব্যাংক তাদের অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করে নেয়। পরে অন্য দাতারাও সেটি অনুসরণ করে।
পরবর্তীতে দুর্নীতি অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। কোনও প্রমাণ না পাওয়ায় কানাডিয়ান আদালত পরবর্তীতে মামলাটি বাতিল করে দেয়। বর্তমানে প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব সম্পদ থেকে অর্থায়ন করা হচ্ছে। ২০১১ সালে সেতুতে রেলপথ সংযুক্ত করে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় ২০ হাজার কোটি টাকা প্রায়।
বর্তমানে প্রকল্পের সর্বমোট বাজেট ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৪ হাজার ১১৫ দশমিক দুই কোটি টাকা অর্থ্যাৎ ৭৯ দশমিক ৮৯ ভাগ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৫০ ভাগ।