সাতক্ষীরা
ধূলিহরে রাস্তা নির্মাণে নিন্মমানের ভাঙা আদলা ইট!

স্টাফ রিপোটারঃ-সাতক্ষীরা উপজেলায় ধূলিহর ইউনিয়নে রাস্তা নির্মাণকাজে ইটভাটার বাতিলকৃত (ভাঙা আদলা) ইটের খোয়া এবং নি¤œমানের ভিটবালু ও নামমাত্র খোয়া দিয়ে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঠিকাদার মাহবুবর রহমান ও সহকারি ঠিকাদার বাবুল হোসেনের বিরুদ্ধে এসব অনিয়মের বিষয়ে একাধিকবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ করলেও কোন মাথা ব্যথা নেই তার। ফলে এ নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে ও নির্মাণকৃত এ রাস্তাটির স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সূত্রে জানা যায়, এলজিইডির অর্থায়নে উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের মাটিয়াডাঙ্গা হতে খড়িয়াডাঙ্গা পর্যন্ত ২.৫ কিলোমিটার রাস্তা বিধি অনুযায়ী পাকারাস্তা নির্মাণ করতে ঠিকাদার মাহবুবর রহমানের ডিজেন সলিউশন প্রতিষ্ঠানের নামে ১ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পায়। সে অনুযায়ী ঠিকাদার রাস্তার মাটি খুঁড়ে বিধি অনুযায়ী ১নং ভিট বালু দিয়ে বালুর ফিলিং কাজ করার কথা। সেই সাথে বালুর ফিলিং এর উপর ম্যাকাডাম করতে ১নং ইটের খোয়া ও সমপরিমাণ বালু দিয়ে ৩০ ইঞ্চি উঁচু করার পাশাপাশি রাস্তার দুইধারে ৩ফুট করে মাটি দেওয়ার কথা।
তবে বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, নিয়মের সাথে কাজের কোন মিল নেই। ঠিকাদার আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নামমাত্র ভিট বালু ও ১নং ইটের খোয়া দিয়ে বালুর উপরে ম্যাকাডামের কাজ করার কথা থাকলেও ইটভাটার বাতিলকৃত ভাঙ্গা ইটের আদলা খোয়া দিয়ে কাজ করছে।
আর রাস্তার দুইধারে ৩তিনফুট করে মাটি দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি না করে রাস্তার ধারে নোনা পানির ঘের থেকে নরম কাদাঁ কেটে ১ফুট করে কাদাঁ দিয়েছে। এতেকরে রাস্তাটির বিভিন্ন জায়গায় ধ্বস নেমেছে।
তাছাড়া নির্দিষ্ট পরিমাপের খোয়া দিয়ে রাস্তা নির্মাণের কথা থাকলেও তা না করে রাস্তা জুড়ে নাম্বার বিহীন ইট রাস্তাতেই আদলা করে ভেঙ্গে কোন রকমে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে রাস্তার বেশির ভাগ অংশে আধলা থেকে শুরু করে সর্বনি¤œ ৪-৫ ইঞ্চি আকারের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে।
এবিষয়ে স্থানীয়রা জানান, ইঞ্জিনিয়ার অফিসের লোকের সামনেই দায়সারা গোছের রাস্তার কাজ করলেও অজ্ঞাত কারণে তারা দেখেও না দেখার ভান করছেন। এসময় তারা দাবী করেন, শুরু থেকেই স্থানীয় লোকজন কাজের মান নিয়ে আপত্তি করছেন।
কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন রাস্তা করবেনা বলে হুমকি দেন। তাই আমরা আর কিছু বলি না। রাস্তা নির্মাণ কাজে ব্যস্ত একাধিক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক। আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয় আমরা সেভাবে কাজ করি।
এবিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল বলেন, দীর্ঘ দেড় বছর ধরে রাস্তাটি নির্মাণ কাজ শুরু করলেও মাত্র আড়াই কি.মি. রাস্তা নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারিনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি।
রাস্তাটি নির্মাণ কাজের শুরুতেই কাজের মান নিয়ে আপত্তি করলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আমাদের কথায় কর্ণপাত করছেননা। বরং তারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নাম মাত্র কাজ করে দায়সারতে ব্যস্ত। এব্যাপারে বারবার উপর মহলে জানানো হলেও রাস্তাটি নির্মাণকাজে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। যে নিয়মে ইট বালু দিয়ে কাজ করছে তাতে রাস্তা অল্প দিনেই দেবে ও রাস্তার উভয় পাশে ধ্বস নামার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান (বাবু সানা) বলেন, রাস্তার কাজে যে ইট ব্যবহার করা হচ্ছে, তা নি¤œমানের ও নাম্বারবিহীন। এতে ব্যবহৃত বালুর মধ্যেও রয়েছে বেশিরভাগ মাটি। স্থানীয়রাসহ আমরা জনপ্রতিনিধিরা এসব দিয়ে রাস্তার কাজ করতে নিষেধ করলেও, ঠিকাদারের শ্রমিকরা তা শুনছেন না। এছাড়াও উদ্ধর্তন কৃতপক্ষকে বারবার সরেজমিনে আসার জন্য বললেও তারা নানা তালবাহানা শুরু করে দিয়েছেন।
এবিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির সহকারী ঠিকাদার বাবুল হোসেন রাস্তাটি নির্মাণ কাজে সকল দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আগে জানলে এ রাস্তাটি নির্মাণ কাজের দায়িত্ব নিতাম না।
এরাস্তাটি নির্মাণ শেষ করতে তাদের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কয়েকলক্ষ টাকা লস হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এই প্রত্যন্তঞ্চলে আমরা যে রাস্তাটি নির্মাণ করছি এইটা এই অঞ্চলের মানুষের জন্য সৌভাগ্য। রাস্তার একধারে খাল অপরধারে ঘের। কোন মালামাল রাখার জায়গা নেই। একারণে কাজে একটু এদিক সেদিক হচ্ছে বলে জানান। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি মুফোফোনে কোন কথা বলবেন না জানিয়ে প্রতিবেদককে দেখা করার জন্য বলেন।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকৌশলী (ইঞ্জিনিয়ার) শফিউল আযম জানান, রাস্তাটি নির্মাণ কাজে অনিয়মের বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। তবে সরেজমিনে কাজটি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।